বাংলাদেশের বাজারে কার্যক্রম গুটিয়ে নিচ্ছে দেশের শীর্ষ মোবাইলফোন অপারেটর গ্রামীণফোনের ৫১ শতাংশ মালিকানার প্রতিষ্ঠান একসেঞ্চার কমিউনিকেশন্স অ্যান্ড সলিউশনস লিমিটেড। এতে করে প্রতিষ্ঠানটির ৬০০ কর্মী চাকুরী হারাবেন। একসেঞ্চার অপারেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুরুষোত্থামা কাদাম্বু এক ইমেইলে ১৭ জুলাই কর্মীদের খবরটি দেওয়ার পর প্রতিষ্ঠানটির কর্মীরা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। আচমকা এমন একটা খারাপ খবরের জন্য কর্মীরা প্রস্তুত ছিলেন না, গত কয়েক বছর ধরে অল্প অল্প করে কর্মী ছাঁটাই করে আসছিলো একসেঞ্চার, কিন্তু ব্যবসা গুটানোর কোন আলামত পাননি কর্মীরা। ফলে কর্মীদের অনেকেই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তনের সুযোগ পেলেও সেটাকে আমলে নেননি। এখন এত সংখ্যক কর্মীর জীবিকার কি হবে? এমন প্রশ্ন রেখে একসেঞ্চার এমপ্লয়িজ ইউনিউয়নের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আহমেদ জানান, ‘একসেঞ্চার বাংলাদেশে ৬০০ কর্মী কর্মরত আছেন, যাদের মধ্যে চার শতাধিক আমাদের এমপ্লয়িজ ইউনিয়নের সদস্য। প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ হলে এত লোকর কর্মসংস্থান কোথায় হবে?' এর আগেও গ্রামীণফোন, জিপি আইটি এবং একসেঞ্চার থেকে চাকুরী ছাঁটাই হলেও সরকার এ ক্ষেত্রে কোন পদক্ষেপ নেয়নি উল্লেখ করে ছাঁটাইয়ের কবলে পড়াকর্মীরা জানান, দিন দিন টেলিকম খাতের চাকুরি ঝুঁকির মধ্যে থাকলেও নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিটিআরসি এ বিষয়ে কোন দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি। একসেঞ্চার অপারেশন্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক পুরুষোত্থামা কাদাম্বু তার ই-মেইলে জানিয়েছেন একসেঞ্চার বাংলাদেশের কর্মীদের শেষ কর্মদিবস হবে ৩০ নভেম্বর , বৃহস্পতিবার । এই দিন পর্যন্ত কর্মীরা তাদের পুরনো সব সুবিধাও উপভোগ করতে পারবেন বলেও জানান কাদাম্বু। কিছু কর্মী গ্রামীণফোনের নতুন আরেকটি উদ্যোগ 'উইপ্রো'তে নিয়োগ পেতে পারেন বলে জানিয়েছেন কাদাম্বু। তবে সেখানে ঠিক কত সংখ্যক লোকের চাকুরী হবে? সেটা তিনি জানাননি। গ্রামীণফোন থেকে ইতোমধ্যে কয়েকশ কর্মীকে ছাঁটাই করা হযেছে। চলতি বছর আরো কর্মী ছাঁটাই করার ঘোষণা দিয়ে কাজে নেমে পড়েছে প্রতিষ্ঠানটি। যদিও গ্রামীণফোন এর কর্পোরেট নাম দিয়েছে 'ভলান্টারি রিটায়ারমেন্ট স্কিম বা ভিআরএস' । এটাকে এখন তারা বলছে,' ঐচ্ছিক সেপারেশন'। নতুন ভিআরএস প্রকল্পে গ্রামীণফোনে চলতি বছরের ৩১ জুলাই পর্যন্ত টানা পাঁচ বছর কাজ করেছেন এমন কর্মীদের আবেদন চেয়েছে। সেখানে একসেঞ্চারের কর্মীরা সেখানে কীভাবে জায়গা করে নেবে, সেটিও একটা প্রশ্ন বলে মনে করছেন চাকুরি হারা হতে চলা একসেঞ্চার বাংলাদেশের কর্মীরা। ২০১০ সালে গ্রামীনফোন ' গ্রামীণফোন আইটি ' বা জিপি আইটি নামে প্রতিষ্ঠানটি চালু করার পর এর ৫১ শতাংশ শেয়ার আমেরিকান প্রতিষ্ঠান একসেঞ্চারের কাছে ২০১৩ সালে বিক্রি করে দেয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বড় ধরণের বিনিয়োগের কথা বললেও সেটি না করে উল্টো দেগশের ৬০০ কর্মীকে বেকার করে ব্যবসা গুটানোর সিদ্ধান্তের খবরে ক্ষুব্ধ কর্মীরা তোমায় আমার ভাল লাগে; অল্প সাজে। মায়ার সাগর ডাগর চোখে একটু খানি কাজল দিলে। লিপিস্টিক এর আলতো ছোঁয়া, হিজাব মাঝে ঢেউ উঠানো কাপড় লহর। দেখতে দেখতে যায় কেটে যায় আমার প্রহর।। নেইল পলিস এর বালাই যে নেই; নখ গুলো তাই স্বচ্ছ এমন; শাপলা ফুলের পাপড়ি যেমন। রূপালি ঐ হাত ঘড়িটা কাঠামোতে হৃদয় আঁকা চিকন চেইনে ঝনঝনিয়ে বাজে কেমন; চুড়ি যেমন। রক্ত রাঙা রঙিন জামা মেঠো পথে সবুজ মাঝে শীতল রকম আগুন লাগায়; কৃষ্ণচূড়া ফুলের মত। তাইতো এমন জৈষ্ঠ্য মাসের কাঠফাটা রোদ হৃদয় মাঝে আয়েস জাগায়; ফাগুন মত। সাদামাটা হালকা সাজে এমন যদি সতেজ লাগে, কাজ কি আর ফেসমেকারে ভূতনী সেজে। বেশ হয়েছে; এরি মাঝে এক বালকের হৃদয় চরে গদগদ এক প্রেম জেগেছে।।আমি সাধারণত রোমান্টিক বা কমেডি নাটক দেখি। ঈদের নাটক দেখা হচ্ছিলো। ব্রাউজ করতে করতে এই নাটকটায় চোখ আটকালো। চোখ আটকানোর কারণ নায়কের ড্রেস। ট্রাফিক পুলিশের চরিত্র করছে আফরান নিশো! বেশিরভাগ মজার বা রোমান্টিক নাটকগুলো হয় উচ্চবিত্তের কাহিনী অথবা একেবারে গ্রামের কাহিনী নিয়ে কমেডি। এর বাইরে নাটক পেলে তাই দেখতে ভালোই লাগে। ট্রাফিক পুলিশ বা রিক্সাওয়ালা বাংলা নাটকের নায়ক হলেতো তাই মিস করা যায় না। ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, আফরান নিশো মারাত্বক ধরনের লাউড অ্যাকটিং করেন। কিন্তু এই নাটকে তার অভিনয় দেখে রীতিমতন অবাক। পরিচালক হিমেল আশরাফ তার সেরাটুকু বের করে এনেছেন। শখ বরাবরের মতন বাজের চাইতে সামান্য একটু ভালো অভিনয় করেছে। তবে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন আরও একজন। তিনি হচ্ছেন শিল্পী সরকার অপু। সন্দেহবাদিক খুতখুতে স্বভাবের ছোটলোক টাইপের মহিলার চরিত্র। অসাধারণ চরিত্রায়ন করেছেন উনি। সব মিলিয়ে নাটকটা ভালো লেগেছে। তাই একটা রিভিউ ভিডিও বানালাম। আশা করি ভালো লাগবে। আকাশ থেকে বৃষ্টি পড়তে দেখেছি। বরফ টুকরো পড়া (শিলা বৃষ্টি) দেখার অভিজ্ঞতা আছে। আকাশ থেকে আম পড়ে/জাম পড়ে/ কিন্তু জীবনে প্রথম অভিজ্ঞতা হল, আকাশ থেকে পাথর পড়া দেখার। আমরা ফুলশিলং ফিরছিলাম থিম্পু থেকে। চালক আগেই সর্তক করে দিলেন। প্রচুর বৃষ্টি হয়েছে। রাস্তাটা আজ কোন ভাবেই নিরাপদ নয়। যদি বেশি খারাপ হয় তবে ফিরে আসব এই শর্তে রওনা হলাম। ঘন্টাখানিক চলার পর চালক সিদ্ধান্ত জানাল সামনে না গেলেই এখন ভাল। যেহেতু আমি ব্যক্তিগত ভাবে গাড়ি ভাড়া নিয়েছি। আমি তার কথা এ বাক্যে রাজি হয়ে গেলাম। সমস্যা হল আর এক বাঙ্গালি পরিবার তার জরুরী কাজ যেতেই হবে। তিনি কিছুতেই থাকতে পারবেন না। তিনি আমাকে নিয়ে যাবেন। তারা ভয় পাচ্ছেন। আমি ভীতু মানুষ তাদের সাথে রওনা দিলাম। তাদের মনে জোর বাড়াতে। যেহেতু যাবার পথে পুরুষ চালক ছিল। এইবার আমি আর ভুল করিনি। একজন মহিলা নিলাম। সেই নারী গাড়ির চালকের অসম্ভব দক্ষতার জন্য গাড়ির সামান্য ক্ষতি হলেও, সবাই বড়সর ক্ষতি ছাড়াই নিচে নেমে আসতে পারি। তিনি সারা রাস্তায় গাড়ি চালিয়েছেন আকাশের দিকে তাকিয়ে। বিশাল পাথরে ধাক্কা থেকে যেমন গাড়ি ও যাত্রীদের রক্ষার দক্ষতা দেখিয়েছেন। ঠিক তেমনি তিনি বিপদে মাথা ১০০ ভাগ ঠান্ডা রেখে কাজ করেছেন। পাথর পড়ার সময় গাড়ি থেকে নেমে একদম পাহাড় ঘেষে দাড়ানো আর ভূমি ধ্বসের স্থানগুলোতে নিরাপদ দূর দিয়ে যাওয়া। সবই তার অভিজ্ঞতার ফল। এসেই দেখি কুইন অফ ফুশিলং আমার জন্য অপেক্ষা করছে। আমার ফোনে ভুটান গেইটের কাছে হাটাহাটি করছেন। যদিও ঐদিন তার অফিস বন্ধের দিন। তাকে আমি ভাবী ডাকি। ভুটানের প্রতিটি মানুষই আন্তরিক। সুতরাং তাদের আন্তরিকতার মূল্য দেওয়া উচিত আমাদের পর্যটক হিসেবে। ভুটানে নতুন নিয়ম হয়েছে। যারা স্থলপথে যাবেন তাদের অবশ্যই স্থানীয় কোন ভুটানির জামানতকারী প্রয়োজন হবে অথবা কোন পযটন সংশ্লিষ্ট্য কোন প্রতিষ্ঠানের পত্র কিংবা থিম্পুতে হোটেল বুকিং। এই তিনের এক ছাড়া এই সপ্তাহ থেকে ভুটানে বাঙ্গালীদের আর ভ্রমণের অনুমতি দেওয়া হবে না। কুইন অব ফুলশিলং আমার জিম্মাদার, পাশাপাশি তারা অন্তরিক ব্যবহার এবং বিনামূল্যে ফুলশিলং থাকা, এক বড় ভাই অতিথেয়তায় আমি শুধু মুগ্ধই না। পাহাড়ে চড়তে ভীতু আমি বার বার ভুটান যাব। প্রতিবছর ভুটান যাব পণ করে আসলাম তার পরিবারের কাছে। আমার ফেবুর বন্ধুরা আপনাদের স্থলপথে যাবার পথে যদি কোন প্রকার সমস্যা হয় ভুটান সীমান্তে। তবে কুইন অব ফুলশিলং এর সহযোগিতা পাবেন শতভাগ নিশ্চিত। গত কয়েকদিনে আমার মৃদু অনুরোধে ৪জন বাঙালীর জিম্মাদার হলেন কুইন অফ ফুলশিলং। * বৃষ্টির সময় রাতে ফুলশিলং থেকে থিম্পু আসা যাওয়া না করুন। *স্থানীয়দের অভিজ্ঞতা/উপদেশ মেনে চলুন। *ভাল হয় চালক হিসেবে মেয়ে চালকদের বেছে নিন। কারণ তারা সেলফোনে কথা বলে না অথবা চ্যাট করবে না গাড়ি চালানো অবস্থায়। *ভুটানিদের প্রতি আস্থা রাখুন। তারা অার যাই করুক। বিপদে আপনাকে ফেলে আসবে না। কিংবা ঝামেলা করবে না। *স্থানীয় আইনগুলো মানার ক্ষেত্রে দৃষ্টি রাখুন। আপনি শুধু একজন ভ্রমণকারী নয়, আপনি বাংলাদেশ নামক দেশের প্রতিনিধিত্বও করেন। * ফুলশিলং থেকে ভিসা পাবার পর অবশ্যই থিম্পুতে যাবেন। যদি না যেতে চান তা ভিসা অফিসারকে অনুরোধের সাথে বলেন। * গালগালি,বাজে কথা বলবেন না। কারণ ভুটানিরা মোটামোটি বাংলা বুঝে। * আপনি একজন বাংলাদেশি নাগরিক আপনার ভ্রমণকালীন ভাল/খারাপ আচরণ অন্য বাংলাদেশির ভ্রমনের উপর প্রভাব রাখবে। *ফুলশিলংয়ে ভিসার জন্য এককপি ছবি ও পাসপোর্টের ফটোকপি দরকার হবে। ছবি ১. ভূমি ধ্বস গাড়ির সামনে রাস্তা হুট করে বন্ধ। ২. গাড়ির সামনে পাথর পড়েছেকেরামত মিঞা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের সাথে কথা বলছে। মন ভালো থাকলে সে এরকমটা মাঝেমাঝেই করে। মন ভালো না থাকলে অবশ্য কথা ভিন্ন। তখন সে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে ভেংচি কাটে। পান খাওয়া দাঁত বের করে, চোখ উল্টিয়ে, ভ্রু-কুচকে এভাবে ভেংচি কাটলে মন ভালো হবার সম্ভাবনা থাকে। আজ তাঁর মন এমনিতেই ভালো। কেরামত মিঞার বাড়িভীটা সংলগ্ন একটি বেশ্যাপাড়া রয়েছে। স্থানীয়রা সেটাকে সুরুপল্লী নামে জানে। সুরু হলো এই পতিতালয়টির মাসি। তাঁর নামেই পতিতালয়ের নাম। দলিল অনুযায়ী অনেক বছর আগে স্থানীয় এক জমিদার এটির মালিক ছিল। তখন এটির নাম ছিল রঙ্গড়তখানা। অর্থাৎ রঙের আড়তখানা। জমিদারি প্রথা বিলুপ্তির সাথে এটির মালিকানাও বিলুপ্ত হয়েছে। বলাচলে সুরুমাসিই এখন এটির মালিক। খুব সাংঘাতিক মহিলা। নিজের প্রয়োজনে কাউকে খুন করতেও তাঁর দ্বিধা হয় না। পতিতালয়ের সকলেই তাঁকে খুব ভয় করে। কাল রাতে সুরুপল্লীতে নয়া কিছু মেয়ে এসেছে। কয়েকজনকে সুরু নিজে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে। কেরামত সামনেই ছিল। কয়েকটা মেয়ে একেবারে ঠাসা কঁচি। লোকালয়ে এধরনের মেয়েদের বলা হয় এক নম্বর। যাদের শরীরে কারো হাত পড়েনি। যাদের শরীরে হাত পড়েছে তাঁদের বলা হয় দুই নম্বর। যাদের শরীরে হাত পড়ার পাশাপাশি আরো অনেককিছু পড়েছে তাঁদের বলে ৩ নম্বর। মেয়েদের কথা ভাবতেই কেরামতের পান খাওয়া চোখে মুখে লোভাতুর একটা হাসি ফুটে উঠে। শরীরটা চনমন করতে থাকে। সে নিজেকে জিজ্ঞাসা করে, - কেরামত মিঞা, তুমি কেমনতর মানুষ? - খারাপ মানুষ! ভীষণ খারাপ মানুষ। বলেই কেরামত মিঞার হাসতে থাকে। লোভাতুর পুরুষের মত হাসি। লোকমুখে কেরামত মিঞা আসলেই ভীষণ খারাপ মানুষ। মাওলানা সাহেব ফতোয়া দিয়ে তাঁকে সমাজচ্যুত করেছে। গ্রামের মুসলিমরা তাঁর ছায়া মারাতে চান না। পতিতালয়টিই তাঁর সমাজ। পেশায় সে পতিতার দালাল। লোকে গালী দিয়ে বলে মাগির দালাল। তাঁর কাজ প্রতিদিন পতিতাদের জন্য খদ্দের ধরে আনা। সুরু মাসির সাথে তাঁর চুক্তি আছে। রোজগারের একটা অংশ সে পায়। বেশি দাম ধরাতে পারলে বেশি টাকা পাবার সম্ভাবনা । আর নতুন মেয়ে মানেই বেশি দাম। পুরাতন মেয়েদের বেলায় খদ্দেররা বেশি টাকা দিতে চায় না। পতিতালয়ে মেয়ে বুঝে দাম। দামাদামি কেরামত নিজেই করে। দালালীর পাশাপাশি কেরামতের আরো একটা কাজ রয়েছে। নতুন আসা মেয়েদের সেই তালিম দিয়ে থাকে। তালিম মানে খদ্দেরকে কিভাবে খুশি রাখতে হয় শেখানো। শেখানোর সময়ে কেরামত নিজের শরীরটাকে উদহরণ হিসেবে ব্যবহার করে। সেটা একটু ঝক্কির কাজ হলেও মজাটাও বেশ। একেকটা নতুন শরীর! অদ্ভুত সেইসব শরীরের ঘ্রাণ। যেন একেকটা সুবাসিত টাটকা ফুল। আর নতুন ফুলগুলোর প্রথম পুরুষ হবার বন্যতার মাঝে অস্বাভাবিক আনন্দতো আছেই। কত জাতের মেয়েই এখানে আসে। বিবাহিত, অবিবাহিত, বাচ্চা, মধ্যবয়স্কা, কেউ উপায়ন্তর না দেখে পেটের দায়ে যেচে আসে। আবার কাউকে জোর করেই এই পেশায় নামিয়ে দেয়া হয়। ভালোবাসার কথা বলে, বিয়ের কথা বলে, চাকরির লোভ দেখিয়ে দেশের বিভিন্নপ্রান্ত থেকে নিয়ে এসে এখানে বিক্রি করে দেয়া হয়। কেউ কেউ অবশ্য কম পরিশ্রমে বেশি টাকা আয়ের জন্য স্বেচ্ছায়ও এসে থাকে। গতর খাটাতে যাদের অনেক আলশেমি লাগে। বিক্রি করে দেয়া মেয়েগুলো প্রথমদিকটায় খুব ঝামেলা করে। পালানোর চেষ্টা করে, আত্মহত্যার চেষ্টা করে। তাঁদের দেখে রাখতে পতিতাপল্লীর সুরুমাসি দুজন লোক রেখেছে। একজনের নাম গোপেষ। আরাকজনের নাম আলতাফ। দুজনই আগে ডাকাত ছিল। এদের তাগড়া অতিকায় শরীরের সামনে দাঁড়ালে কেরামতকে পুচকে মনে হয়। পাহারা দেয়ার জন্য এদের কাছে মান্ধাতার আমলের থ্রি নট থ্রি দুটো রাইফেল আছে। এতেই অবশ্য কাজ চলে যায়। এদের ভয়েই মেয়েগুলো একসময়ে পোষ মানতে বাধ্য হয়। কেরামত তাঁদের জন্য সাজসজ্জ্বার সরঞ্জাম নিয়ে আসে। লাক্স সাবান, সানসিল্ক শ্যাম্পু, আতরের শিশি, লিপিষ্টিক, নেলপলিশ সহ আরো কত কি! এসব ভাবতে ভাবতে কেরামত আবার হাসে। কুৎসিত চিন্তার হাসি। আজ রাতে তাঁর আবার তালিম দেয়ার দায়িত্ব। কেরামত নিজেকে আবারও আরাকটু জোরে জিজ্ঞাসা করে, - কেরামত মিঞা, তুমি কেমনতর মানুষ? - ভীষণ, ভীষণ খারাপ মানুষ! হাহাহা... ২ সাফিয়ার চোখভর্তি পানি। ভয়ানক চিন্তায় তাঁর মাথা ভোঁ ভোঁ করছে। সে বুঝতে পারছে না আসলেই কী ঘটছে। তাঁকে একটা রুমের ভেতরে তালা মেরে রাখা হয়েছে। সাথে আরো ২জন নারী। একজন তাঁর মতই কাঁদছে আর মাঝে মাঝে মূর্ছা যাচ্ছে। খানিক গোঙাচ্ছে আর বলছে, - আব্বার কাছে যাব। আমি আব্বার কাছে যাব। আমি এই চাকরি করব না। আমার চাকরির দরকার নাই। আমারে রাইখা আসেন। তাঁর এই আবেদন শোনার মত এখানে কেউ নাই। সাফিয়ার বুঝতে বাকি থাকে না। এ মেয়েটিও তাঁর মত প্রতারিত। চাকরির কথা বলে একে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। সাফিয়ার নিজেরই এখনো বিশ্বাস হয় না। নিজেকেও বিশ্বাস হয় না। লোকটাকে সে কতখানি ভালোবেসেছিল। কত স্বপ্ন দেখেছিল তাঁকে নিয়ে! লোকটা বলত, - সাফু, দেইখো একদিন আমাগো একটা ঘর হইব। পাহাড়দ্যাশে ঘর। সেইখানে তুমি রাজরাণীর মত থাকবা। আমি খাইটা আনুম। তোমারে কিচ্ছু করন লাগব না। তোমার কাজ খালি একটাই। আমি আইলে আমার সামনে বইসা থাকবা। ব্যাস। সাফিয়া শুনে বলত মুচকি হেসে অনুযোগের স্বরে বলত, - আপনার মুন্ডু! তাইলে রান্নাবাড়া কে করব? ভুতে আইসা রাইন্ধা দিব? লোকটা বলত, - আরে রান্নাবাড়ার লাইগা লোক থাকব। তোমারে আমি কুনু কাম করতে দিমু না। এই কইয়া দিলাম। তোমার কাম হইলো রাইতে যখন আন্ধার নামবো তখন আমার সামনে বইসা থাকবা। আমি বাত্তির আলোতে আমার সাফুরে দেখুম। সাফিয়া শুনে লজ্জা মেশানো ঠোটে বলত, - পারুম না। আমি আপনার কাছেই যামু না। - আয় হায় তাইলে আমাগো বাচ্চা কেমনে হইবো? ও সাফু কি কও? একথা শুনে সাফিয়া আরো লজ্জা পেয়ে যেত। তাঁর কানগুলো যেন গরম হয়ে উঠত। কেমন যে লাগত মনে! লোকটা কইতো, সাফু আমাগো কিন্তু দুইটা বাচ্চা হইব। তোমার মত ধলা। বড়টার নাম দিমু আলী। আলী মানে উইচা। পোলাডা তোমার মতই উইচা লম্বা হইব। আর ছুডুটার নাম হইব, তালি। আলীর সাথে মিল রাইখা তালি। সাফিয়া এই কথা শুনে প্রতিবাদ করত, -তালি আবার কেমন নাম? লোকটা শুইনা হাসত, আহা কি মধুর লাগত সেই হাসি! অথচ এই হাসিটাই সাফিয়াকে ধোকা দিল! সব ছেড়ে যার জন্য চলে আসল। সেই কিনা তাকে এখানে এনে রেখে দিল! যাবার সময় বলল, সাফু তোমার দামটা খারাপ না! মনস্থির করসি এই টাকায় গঞ্জে দুই কাঠা জমি কিনমু। ভালো থাইকো। কাস্টমারের মন রাইখো। সাফিয়া নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না এখনো। সাফিয়ার পাশেই আরাকজন মধ্যবয়স্কা। ইনি কাঁদছেন না। বরং বেশ হাসিখুশি। সাফিয়া আর ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকা মেয়েটিকে সান্তনা দিচ্ছেন। মাঝে মাঝে বলছেন, - কাইন্দ না। কামডা কিন্তু খারাপ না। স্বয়ামী থাকলেও এইডাইতো করন লাগে। উপরে স্বয়ামীতো সবসময় দেহে না। প্যাটের খিদায় মাডি কাটোন লাগে। দিনশেষে দ্যায় ২০০ টাকা। এইহানে আধাঘন্টায় ২০০... ৩ কাঁদতে কাঁদতেই সাফিয়া ঘুমিয়ে পড়েছিল। আচানক কিছু কথা-বার্তা শুনে সে চমকে জেগে উঠল। আওয়াজটা পাশের ঘর থেকে আসছে। সে তাকিয়ে দেখে ঘরে থাকা মধ্যবয়স্কা মহিলাটি নেই। তাঁর খিল খিল করে হেসে উঠার শব্দ শোনা যায় পাশের ঘর থেকে। পরিষ্কার শুনতে পায় সাফিয়া। তাঁকে একটা পুরুষ কন্ঠ বলছে, - শোনো, কাষ্টমার হইলো নারায়ণ, অনেকে বলে লক্ষ্মী কিন্তু লক্ষ্মীতো মেয়ে মানুষ। তোমাগো কাষ্টমার সব পোলামানুষ। তাই আমি কই নারায়ণ। কি কথা ঠিক কইসি না? প্রতিত্তরে মধ্যবয়স্কা কি বলেন শোনা যায় না। পুরুষকন্ঠ আবার বলে, - নারায়ণরে সন্তুষ্ট রাখবা তাইলে দেখবা আমোদ-ফুর্তির অভাব নাই। নারায়ণরে সন্তুষ্ট রাখতে হয় কেমনে জানো? দাঁড়াও তোমারে শেখাইতেসি। প্রথমে নিজ হাঁতে নারায়ণের পোশাক-আশাক খুইলা দিবা। কই, দেও দেখি,... এটুকু শুনে সাফিয়া দুইহাতের আঙ্গুল দিয়ে কান বন্ধ করে ফেলে। সে দেখে পাশে থাকা মেয়েটির কোন রা নেই। বোধহয় আবার মূর্ছা গিয়েছে। কান বন্ধ থাকা সত্ত্বেও কথাগুলো শোনা যায়। ভয়ংকর সব কথা। সাফিয়ার মাথা ঘুরতে থাকে। পেটের ভিতরে পাঁক দিতে শুরু করে। ভীষণ বমি আসছে তাঁর। চোখের পর্দায় নেমে আসছে নানান রঙ। তারপর আর কিছু বলতে পারে না সাফিয়া... ৪ কেরামতের সামনে একটা বিছানা। বিছানায় লাল চাদর। চাদরে শরীর এলিয়ে একটা মেয়ে পড়ে আছে। নাম সাফিয়া। এখন সে অচেতন। দেখতে অসম্ভব সুন্দরী। ঠোটগুলো নিষ্পাপ শিশুর মত। বয়স ১৭ কি ১৮ হবে। কেরামত সাফিয়ার ওড়নাবিহীন শুভ্র বক্ষের খাঁজের দিকে কামুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। একটু আগে সে আনোয়ারা নামের একজন মহিলাকে তালিম দিয়েছে। মহিলাটি স্বেচ্ছায় এই পেশা বেছে নিয়েছে। আগে একটা বিয়ে হয়েছিল। কেরামতের শরীরের আনন্দ তাতে অবশ্য খুব বেশি ফিকে হয়ে যায়নি। আনোয়ারার সাথে সময় কাটানোর পর খানিকটা জিরিয়ে নিয়ে এই মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে। মেয়েটার গাল কাশ্মীরি আপেলের মত খানিকটা লালচে। কেরামত মনে মনে ভাবে মেয়েটার নাম দেবে গোলাপী। এইপাড়ায় আসল নামে ব্যবসা চলে না। ছদ্ধনাম ধরতে হয়। সেটাই আসল নাম। গোলাপী নামটা মেয়েটাকে মানাবে। কেরামত তাঁর মুখে-চোখে পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফেরালো। চেতনা আসার পর মেয়েটা খানিকক্ষণ ফ্যাল ফ্যাল করে কেরামতের দিকে তাকিয়ে ধপ করে কেরামতের পা ধরে কান্না শুরু করে দিলো। - আপনি আমার পিতার মত, দোহাই লাগে আমারে কিছু কইরেন না। আমারে ছাইড়া দেন। একথা বলে মেয়েটি ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো। তাতে কেরামতের কামুক মুখায়ববের ভাবান্তর ঘটল না। এসব দৃশ্য তাঁর অচেনা নয়। তাচ্ছিল্য করে সে বলল, - মা জননী, এইখানে কেউ কারো পিতা কিংবা ভাই হয়না। এখানে সবাই শুধু স্বামী। এই মূহুর্তে আপনারে আমি শিখাইব কিভাবে স্বামীদের সহীত মিশতে হয়। আচার ব্যবহার করতে হয়। একথা শুনে মেয়েটির কান্নার স্বর দ্বিগুণ বেড়ে গেল। - আপনার দুইটা পায়ে পড়ি। আমারে ছাইড়া দেন। কেরামতের খানিকটা ধৈর্য্যচূতি ঘটল। বিরক্ত কন্ঠে সে বলল, - মাগি তোরে ছাড়লে আমার রোজগারের কি হবে? তোরে ছাড়মু আমারে কি পাগলায় কামড়াইসে? বলেই সে পা সাফিয়ার কাছ থেকে পা ছাড়াতে লাগল। সাফিয়া তবুও পা ছাড়ছে না। - আমারে তাইলে মাইরা ফালান। তবু আমার এই ক্ষতিটা করবেন না। - তুই তাইলে নিজের ইচ্ছায় তালিম নিবি না তাইতো? নিজের ইচ্ছায় তালিম না নিলে, কেমনে তালিম দিতে হয় সেইটা আমার ভালো জানা আছে। মাগি দাঁড়া! এই কথা বলে কেরামত সাফিয়াকে স্বজোরে লাথি মেরে দূরে সরিয়ে দিয়ে ঘরটা থেকে বের হয়ে গেল। যাবার সময় বাহির থেকে ঘরের খিল আটকে দিল। বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল গোপেষ। আজ বোধহয় আলতাফ আসেনি। এরা পালা করে পাহারা দেয়। প্রয়োজনের সময় অবশ্য দুজন একসাথেই পাহারা দেয়। কেরামতকে রাগে ফুসতে দেখে গোপেষ বলল, - কি কেরামত মিঞা ঘটনা কি? মালডা আরাম দিতাসে না নাকি? বলেই সে খ্যাক কইরা হেসে দিল। হাসি দেখে কেরামতের শরীর জ্বলে গেল। - আরাম দেয়া নেয়ার কাজতো আমার। তুমি পাহারা দেও। এত জাইনা তোমার কি? তোমার এত পেরেশানির কি? - পেরেশান কি আর সাধে হই কেরামত মিঞা। মাঝে মাঝেই যে তোমার কাছ থিক্কা পক্ষী উড়ন দেয়। কেরামত এই কটাক্ষটা ধরতে পারে। এর আগেও অনেক মেয়ে তাঁর হাত থেকে পালিয়ে গিয়েছে। কখনো কেরামতকে জিম্মি করে, কখনোবা আঘাতের মাধ্যমে অচেতন করে। কেরামত একদলা থুথু ফেলে বলে, - আমার কাছ থিকা উড়নের সময় তুমি কি ছিরছিলা গোপেষ? আমার কাছ থিকাতো মাগি পলাইসে। তোমার যে নিজের বৌ তোমারে ছাইড়া পলাইসে। সেইডা মনে থাকে না? এই উত্তরে গোপেষ কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে উঠে। - আরে খেপতেছ কেন? মশকরা করতেছিলাম। - এখন মশকরা রাইখা তোমার বন্দুকটা দ্যাও। আর একটু গঞ্জে গিয়া রশি লইয়া আইসো। ঘরে রাখা পুরাতন রশি ইন্দুর কাইটা রাখসে। এইগুলারে রশি দিয়া বাইন্ধা রাখতে হবে। গোপেষ প্রথমে গঞ্জে যেতে রাজি হতে চায় না। পরে কেরামতের পীড়াপীড়িতে গঞ্জের দিকে হাটা ধরে। কেরামত গোপেষের বন্দুকটা নিয়ে পাশের ঘরে যায়। সেখানে আরাকটি মেয়ে হাটুমুরি দিয়ে বসে আছে। কেরামতকে দেখেই মেয়েটা একটা চিৎকার দিয়ে মূর্ছা যায়। কেরামত মেয়েটারে পাজকোলা করে পাশের ঘরে নিয়ে আসে। তারপর পানি ছিটিয়ে জ্ঞান ফিরিয়ে সাফিয়া আর তাঁকে পাশাপাশি বসায়। মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে রাগে গজরাতে গজরাতে বলতে থাকে, মাগি কত ভাবছিলাম, আপোষে কি মজাটা করমু। এখনো সময় আছে ক তোরা কি স্বেচ্ছায় তালিম নিবি না আমি পিডান শুরু করুম? একথা বলেই কেরামত বন্দুকের বাট দিয়ে মেয়েটাকে মারতে উদ্যত হয়। দুটি মেয়ের কেউ কোন কথা বলতে পারে না। দুজনের কান্নার স্বর একসাথে মিশে শব্দটা আরো তীক্ষ্ণ হয়ে উঠে। তাঁদের আর কোন গতান্তর নেই। হঠাৎ ঠিক তখনি কেরামতের রাগি মুখটা হাসিতে ভরপুর হয়ে উঠে। সেই পান খাওয়া দাঁতের লোভাতুর হাসি। হাসি দেখে মেয়ে দুটি আরো সংকীর্ণ হয়ে পড়ে। বন্দুকের বাটটা কেরামত দুহাত দিয়ে ধরে। তারপর আচানক নিজেই নিজের মাথায় স্বজোরে আঘাত করে। ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হয়ে আসে। হুট করে এমন ঘটনা দেখবে মেয়ে দুটো আশাও করেনি। কেরামত তাঁদের দিকে তাকিয়ে বলে, পশ্চিমের রাস্তায় গঞ্জ ঐদিকে গোপেষ গ্যাছে। তোমরা দক্ষিণের খেতগুলো ধরে চইলা যাও। কিছুদূর গেলেই নদী। নদী পার হইয়া আর কিছুদূর পর বিশ্বরোড পাইবা। সেখানে সবসময় গাড়ি যাতায়ত করে। যেকোন একটাতে চইরা সোজা মানিকগঞ্জ জেলা শহর। শহরে গিয়া বাসে চইরা যার যার বাড়ি চইলা যাইবা। এই বন্দুকটা সঙ্গে লও। চালাইতে পারো? কেরামতের প্রশ্নে সাফিয়া ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সে কিছুই বুঝতে পারে না। কি দেখছে সে? এই ভয়ংকর মানুষটা তাঁদের দুজনকে ছেড়ে দিচ্ছে। কেরামত আবার বলে উঠে, - না চালাইতে পারলেও সমস্যা নাই। কেউ সামনে আইলে খালি নলটা তাঁর বরাবর ধইরা রাখবা ব্যাস। আগাইতে সাহস পাইব না। যাও যাও দেরী কইরো না। গোপেষ আইলো বলে। সুরুমাসি টের পাইলে তোমাগোসহ আমারে জিন্দা পুইতা দিব। বলে সে নিজেই তাঁদের দুজনকে টেনে এনে দক্ষিনের পাঠক্ষেতের মধ্যে দিয়ে রাস্তা দেখিয়ে দেয়। কোন কথা না বলে উর্ধ্বশ্বাসে পালাতে থাকে দুজন। কেরামত তাকিয়ে থাকে আর মনে মনে ভাবে, এভাবে সে এই পেশায় আসতে রাজি না এমন কত মেয়েকেই পালাতে সাহায্য করেছে। তাঁর মাকে যদি কেউ এভাবে সাহায্য করত তবে হয়তো তাঁকে এই বেশ্যাপল্লীতে জন্মাতে হতনা। মায়ের কথা মনে করে উদাস গলায় কেরামত নিজের অজান্তেই আওরাতে থাকে, - কেরামত মিঞা, তুমি কেমনতর মানুষ? - ভীষণ খারাপ, খারাপ মানুষ! মার পিসি অন থাকা মানে অবিরাম গান বাজতে থাকা। অহনার সাথে যখন খুব বেশি বেশি কথা হতো, দীর্ঘ সময় ধরে, মাঝে মাঝে সে বলতো, তোর কাছে কি তোর গানই বড়ো, নাকি আমি বড়ো? তুইই বড়ো। আমি ইন্সট্যান্টলি বলতাম। তাহলে তোর গান বন্ধ কর। একটুসখানি ঝিম মেরে বসে থেকে গম্ভীর স্বরে অহনা অনুজ্ঞা করতো। কিন্তু আমি ভলিয়্যুম আরো বাড়িয়ে দিয়ে বলতাম, তুই এই গানটা শোন। এমন মাধুর্যমাখা গান তুই জীবনেও শুনিস নি। তারপর, মোবাইলটা পিসির স্পিকারের সামনে বসিয়ে রাখতাম, যতক্ষণ গানটা বাজতো। গান শেষ হলে কানের কাছে মোবাইল নিতে গিয়েই দেখতাম লাইন কেটে দিয়ে অহনা পগার পার। এরপর অভিমান করে অহনা আর কল করতো না; যে মেয়ে প্রতিটি নিশ্বাসের সাথে মিস্ডকল দেয়, আর মিস্ডকল দিতে দিতে মোবাইলের বাটন ক্ষয় করে ফেলে, সেই মেয়েই একটানা দু-তিনদিন ধরে আর মোবাইলই অন করে না। ওর সাথে গান আর কবিতা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা আর বিতণ্ডা হতো; মোবাইলেই। মোবাইল কোম্পানিগুলো প্রতি মিনিটে ২৫ পয়সা কলরেট করেছিল আমাদের কল্যাণের কথা ভেবে। হেন কোনো গান নেই যা ওর জানা নেই, কী সুর, কী তার অন্তরা। আমার পড়া হেন কোনো কবিতা নেই যা ওর আজও পড়া হয় নি; আর ও যেসব কবিতা পড়েছে আর আমি তা পড়ি নি, তার তালিকা অনেক অনেক দীর্ঘ। কথায় কথায় ও রেফারেন্স টেনে বলতো, তুই কি ঐ বইটা পড়েছিস? কোনটা? মেমসাহেব? না? মেঘনাদবধ? না? বঙ্কিমচন্দ্রের সব বই পড়েছিস? না। রবীন্দ্রনাথ? বিদ্যাসাগর? শরৎচন্দ্র? শরৎচন্দ্রের অর্ধেকের মতো পড়েছি। হুমম! এই পড়া নিয়েই তুই বই লেখা শুরু করেছিস? আমি তো হুমায়ূন আহমেদের কোনো বই বাদ রাখি নি। তুই একটা বাচ্চা পুলা। হুমায়ুন আজাদের বই পড়েছিস? অল্প কয়েকটা। তুই এক কাজ কর, আগামী ১০ বছর তুই লেখালেখি বন্ধ রাখ। এই দশ বছরে এদের বইগুলো আগে পড়। পড়াশোনা না করে লিখিস বলে তোর লেখা মাকাল ফলের মতো। আমি ক্ষেপে গিয়ে বলি, ঐ পণ্ডিতনি, তুই তো অনেক পড়েছিস, তাহলে আমার মাকাল ফলের মতো একটা ফল প্রডিউস করে দে। তখন তো তোর কপাল পুড়বে। আচ্ছা, আমাদের জাতীয় সঙ্গীত কার লেখা যেন? অহনা হেসে দিয়ে বলতো, তুই কি আমার টেস্ট নিচ্ছিস? বল না। কেন, রবীন্দ্রনাথের লেখা। তাহলে শূন্যস্থান পূরণ কর : ওমা ফাগুনে তোর আমের বনে ঘ্রাণে পাগল করে.... এর পরের লাইনটা কী? অহনা চুপ করে থাকে। কী, পারিস না? স্যরি রে, জাতীয় সঙ্গীত আমার পুরোটা মুখস্থ নেই। পণ্ডিতনি! খুব তো ঝাড়লি এতক্ষণ। তোর তো দেখি ‘ষোলো আনাই মিছে।’ তোর কি পুরোটা জানা আছে? শুধু জানাই না, পুরোটা সুর করে গাইতেও পারি। আমাকে একটু শোনা না ভাই! আমি পুরোটা গাই : আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি.... অহনার মুগ্ধতা আমায় কী যে অনুপ্রেরণা দিত! যে জিনিসটা ওর জানা নেই, অথচ আমি জানি, তা ওকে জানিয়ে আমি দিগ্বিজয়ীর সুখ পেতাম, আর তাতে ওর মুগ্ধতা বেড়ে যেত তরতর করে, আমার প্রতি। আমার ভাঙা আর কাঁচা কণ্ঠে ‘আমার সোনার বাংলা’ শুনে অহনা বললো, গানটা এর আগে অ্যাসেম্বলিতে অনেক শুনেছি। রেকর্ডেও শুনেছি। কিন্তু এত ‘সুন্দর’ লাগে নি। তুই খুব চমৎকার গেয়েছিস। এই গানটা শুনেছিস? কোনটা? যেটা সবসময় তোকে শোনাই? তুই তো কত গানই আমাকে শোনাস। কোনটার কথা বলবো? তুই একটা কালা। কেন? কেন বললি একথা? কারণ, ইদানীং এই গানটা প্রায় রাতদিন ধরেই বাজিয়ে থাকি। আর এটা তোর কানে ঢুকলো না? অসভ্যর মতো কথা বলছিস কেন? স্যরি। নে, গানটা আবার শোনা। আমি গানটা আবার শোনাই। গান শুনে অহনা যথারীতি মুগ্ধ হয় আর অবাকও হয়। বলে, এ গানটা আমি তোর কাছেই প্রথম শুনলাম। আরেকবার শোনা তো। আমি আরেকবার পিসিতে গানটা শোনাই, আর তৃপ্তিতে আপ্লুত হয়ে উঠি। কার কণ্ঠ রে? শিল্পীর নামটা জানা নেই। সন্দীপন? আমি তো সন্দীপনের কণ্ঠ চিনি না। ওর গান শোনা হয় নি। পবন দাশ বাউলও হতে পারে। আমি তাঁর গানও শুনি নি। তুই কার গান শুনেছিস? এত ঝাড়ি মারিস কেন, কথায় কথায়? তুই কি ঝাড়ুদার? অহনা নরম হয়ে বলে, গানটা আমার খুব খুব খুবই ভালো লাগলো। আরেকবার ছাড় তো। এভাবে অনেক অনেক বার, অনেক অনেকদিন শিল্পীর নাম না-জানা এ গানটা আমরা মুগ্ধ হয়ে শুনেছি। একদিন অহনা জিজ্ঞাসা করে, তোর মনে কি খুব দুঃখ? কেন? এই গানটা যে এত শুনিস, তাই বললাম। আমার মনে হয় জীবনে কেউ তোকে ঠকিয়েছে, বা ঠকাচ্ছে। যাই হোক, মনে কোনো দুঃখ রাখবি না, বুঝলি? হুম! পিসিতে গানটা ছেড়ে দিই, সুরের ভুবনে হারিয়ে যেতে যেতে কাউকে-না-বলা দুঃখটা ভুলে যেতে চেষ্টা করি। তোরে রাং দিল কি সোনা দিল, তুই পরখ কইরে দেখলি না গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা গুরু দিল খাঁটি সোনা রাং বইলে তোর জ্ঞান হইল না, ওরে দিনকানা ওরে উপাসনা বিনে কি তোর মিলিবে রে রুপাসোনা গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা তোরে রাং দিল কি সোনা দিল চণ্ডীদাস আর রজকিনী তারা প্রেমের শিরোমণি, রাং কইরাছে সোনা তারা এক প্রেমেতে দুইজন মইলো, এমন মরে কয়জনা গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা তোরে রাং দিল কি সোনা দিল, তুই পরখ কইরে দেখলি না গুরু তোরে কী ধন দিল চিনলি না মনা নির্নিমেষ তাকিয়ে আকাশে খুঁজে পাই তোমায়, মেঘ হয়ে ভাসছ আকাশময়, তোমার ঠিক পিছনে আমি! রোদ্দুর হয়ে হাত বাড়াই ধরা দাও না!! কালো মেঘগুলো মুচকি হাসে, তোমার আমার খেলা দেখে। তুমি আমার আকাশময় ভেসে বেড়ানো শুভ্র সাদা মেঘ, গোধূলীলগ্নের রক্তিম আভার মত ঠোঁটে তোমার ছুঁয়ে দেই অনামিকার স্পর্শ, তুমি চমকে উঠে বলো রোদ্দুর ভালবাসি শুভ্র মেঘের বুকে মাথা রেখে ভেসে যাই নিমেষেই। আমাদের দেশে জনগণ বোধহয় কখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে না! মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে গেলে মেরুদন্ড শক্ত হতে হয়, কিন্তু এই জাতির মেরুদন্ড খুবই দুর্বল! তাই এই জাতির সম্ভবত কোনো দিন কোনো উন্নয়ন হবে না। এমন মনে করার বেশ কিছু মূল কারণ রয়েছে। একটু বিস্তরভাবে পর্যায় ক্রমে বলতে হবে, আমাদের দেশের মানুষ পড়ালেখা করে যেন শিক্ষা জীবনের শেষে একটা চাকুরী পেতে পারে, কারণ ভালো চাকুরী না পেলে সমাজে দাম নেই! বেশিরভাগ মানুষের একটাই লক্ষ্য ভালো রেজাল্ট করা, জিপিএ ফাইভ পাওয়া! এটাই স্বাভাবিক, কারণ আমাদেরকে তেমনি করে গড়ে তোলা হচ্ছে। শিক্ষার মূল উপাদান কি তা কেউই গ্রহণ করতে পারছে না, শিক্ষকরা দিতেও ব্যর্থ হচ্ছেন। বেশিরভাগ ছাত্র-ছাত্রীর অবিভাবকগন চাইছেন পরীক্ষার ফলাফল। ছেলে মেয়ে কি শিক্ষা নিচ্ছে সেদিকে খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই। সবারই একই চিন্তা পরীক্ষার আগে কিভাবে প্রশ্নপত্র পাওয়া যায়; প্রশ্ন পত্র ফাঁস,, থাক সেই প্রসঙ্গ। পড়ালেখা করা হয় জ্ঞান অর্জনের জন্য। কিন্তু আধুনিক যুগে তাই হয় কি? হয় না। স্মার্ট ফোনের যুগ এখন সবাই স্মার্ট হয়ে গেছে। সভ্যতা বেশ ভালো ভাবে বিকশিত হয়েছে এবং গলা টিপে ধরেছে (কথাটা অনেকের শক্ত লাগতে পারে)। ভালো রেজাল্ট, জিপিএ ফাইভ না পেলে পাশের বাড়ির বন্ধুর সামনে মুখ দেখানো যাবে না, ভালো কলেজে ভর্তি হওয়া যাবে না! ভালো কলেজে ভর্তি না হওয়া গেলে মান সম্মান অক্ষুন্ন থাকবে না, ভালো রেজাল্ট করতে হলে ভালো কলেজে ভর্তি হতে হবে, ভালো রেজাল্ট থাকলে ভালো ভার্সিটিতে ভর্তি হওয়া যাবে, ভালো রেজাল্ট করতে পারলে ব্যাংকে একটা ভালো চাকুরী পাওয়া যাবে অথবা কোন মতে টেবিলের নিচ দিয়ে লেনদেন করে একটা সরকারি চাকুরী ব্যবস্থা করা যাবে, এই..! আর কার কি হলো এখন আর দেখার সময় নাই!! একটা চাকুরিজীবি লোক বিশেষ করে যার বাড়ি আছে, বাড়ি ভাড়া নিয়ে কোনো চিন্তা করতে হয় না। দেশের পরিস্থিতি নিয়ে তার চিন্তা এমন; দেশে যা ঘটুক তাতে আমার কি?! আমি তো ভালো আছি, আমার বাড়ি আছে মাস শেষে বেতন পাই, ভালো চাকুরী, পদ ভালো, ভালো সম্মান আছে। কে কি করলো সেটা আমার দেখার বিষয় না, ক্ষতি হলে সবার হবে আমার একার তো হবে না! প্রায়ই সকল চাকুরিজীবীদেরই একই চিন্তা-ভাবনা!! একজন বড় বা ছোট ব্যবসায়ীও কিন্তু এরকম চিন্তাই করে যে, আমি কষ্ট করে ব্যবসা করছি, আমার মূলধন বিনিয়োগ করা, মাস শেষে আমাকে লাভ গুনতে হবে যেভাবেই হোক। কে কি করছে সেটা আমার দেখার বিষয় না। তার মনে এও চিন্তা আসতেই পারে, দেশের ক্ষতি হলে আমার কি? কে দুর্নীতি করলো, রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র হোক বা না হোক বা ট্রানজিট কে ফ্রি ভোগ করলো, বাজেট কেমন হলো, সরকার কৃষি ও শিক্ষা খাতে কোনো নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করলো কি না, কোথায় কোনো অন্যায় বিচার হলো কিনা, সেটা আমার দেখার বা জানার বিষয় নয়। দেশে আইন আছে, আর ক্ষতি হলে সবার হবে আমার একা হবে না!! একটা জিনিস সবাই লক্ষ্য করে থাকবেন যে বৃষ্টি হলেই ঢাকা শহরে রাস্তায় পানি জমে যায়! চলাচল ব্যবস্থা অচল হয়ে পরে। মূলত এর জন্য দায়ী কে। প্রশাসন তো দায়ী সাথে জনগণও দায়ী! আমি আমাদের শহরের একটা চিত্র আলোচনা করি, আমাদের এলাকায় যেখানে বাস করি সেখানে বৃষ্টি হলে দু তিন দিন রাস্তা দিয়ে চলাফেরা করা মুশকিল ও বিপদজনক! এর মূল সমস্যা হলো ড্রেইনেজ ব্যবস্থা! এলাকার অনেক নাগরিক বিশেষ করে যারা ভাড়া থাকে তারা ময়লা ফেলার জন্য ডাস্টবিন ব্যবহার করে না, তারা কি করে জানলে অবাক হবেন! তারা ময়লাগুলো পলিথিনে ঢুকিয়ে বেঁধে ড্রেইনে ছুড়ে ফেলে!! এরকম শত শত বাড়ি আর শত শত পলিথিনের ব্যাগ এবার বলেন কিভাবে ড্রেইন দিয়ে পানি নিষ্কাশন হবে। যদি এদের বলা হয় আপনারা ময়লা এভাবে ড্রেইনে ফেলবেন না। উনাদের উত্তর, এটা সরকারি জায়গা আমরা ফেলবই আপনি বলার বা বাধা দেয়ার কে। এদেরকে ফেরেশতাও বুঝাইতে ফেল করবে। আর আছেন এলাকার বড় নেতা বা মোড়ল একটু প্রভাব, প্রতাপ শালী বা বাড়িওয়ালা যারা বাড়ি ভাড়া দেয় তাদেরকে যদি বলা হয় কোনো উদ্যোগ বা কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করতে; তাহলেও ফলাফল শূন্য। তাদের তো আর সমস্যা নাই তাদের চলাচলের জন্য গাড়ি আছে, মাস শেষে বাড়ি থেকে ভাড়া উঠায়, তাদের বাড়ি রাস্তা থেকে ৩.৫ ফিটের উপরে বৃষ্টি হোক আর বন্যা তাদের কোনো অসুবিধে নেই। তারা নিশ্চিন্তে আছেন। যখন তাদের কে কেউ এই বৃষ্টির পানি ড্রেইনের পানি জমে রাস্তার বেহাল দশার কথা বলা হয়, তখন তারা সুন্দর করে বলে দেন, আমার কি, সমস্যা হলে সবার হবে আমার একার তো আর হবে না..!! সিটি কর্পোরেশন বা পৌরসভার কর্মকর্তাদেরও কাজের কোনো ঠিক ঠিকানা নেই। পরিকল্পনা করে এক রকম আর কাজ করে আরেক রকম! রাস্তা ঘাট, ড্রেইনেজ ব্যবস্থা, ডাস্টবিন ইত্যাদির উন্নয়ন ব্যবস্থা তাদের নিয়ে চিন্তা খুব কম। মাঝে মাঝে উপর মহল বা জনগণ আর নাহলে স্থানীয় লোকের হুঙ্কার টাইপ অনুরোধে কিছু সামান্য কাজ করা হয়। কিন্তু তাও পর্যাপ্ত নয়! আর বাদবাকি সময় দেখা যায় প্রশাসন কর্মকর্তারা উধাও। (কথা গুলো নিজ অভিজ্ঞতা থেকে গোছানো) রাজনীতির কথাই যদি বলি তাহলে কি দাঁড়ায়! আমাদের দেশে সঠিক রাজনীতি, রাষ্ট্রনীতি চর্চা হয় না। অনেকেই রাজনীতি ভালো বুঝে, এটা নিয়ে কথা বলে, লেখালেখি করে, কিন্তু তা কতটুকু ইফেক্টিভ? শূন্য (0)..! আমাদের দেশে রাজনীতিবিদ গড়ে উঠছে না, মানে রাজনীতি করতে সচেতন ও সাবলীল নাগরিক কেউ আগ্রহী নয়। এই দেশে একটা ছেলে রাজনীতিতে পা বাড়ায় তার চিন্তাই থাকে কিভাবে দুর্নীতি করে নিজের পকেট বড় করা যায়!! আর, যারা রাজনীতিতে আসছে তারা হয়তো কেউ বাবা-চাচাদের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সহযোগিতা পেয়ে আসছে নয়তো ছাত্র রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছে অর্থ ছিটিয়ে বা স্থানীয় দাপটে। এরা এসে সেই অর্থ আর প্রতিপত্তির আর ক্ষমতার পেছনেই ছুটে দেশের কোনো উন্নয়ন মূলক কাজে ছুটে না। ছোট বেলা থেকে কেউই প্রেসিডেন্ট বা মিনিস্টার হওয়ার স্বপ্ন দেখেনা। রাজনৈতিক অঙ্গনের পাইপ লাইনে এমন কোনো সাধারণ বা অসাধারণ জেনারেশন নেই যারা ভবিষ্যতে এসে রাজনীতি করবে। তাই সেই পুরোনো ব্যক্তি বর্গ ও তাদের ছেলে মেয়ে রাজনীতিতে যোগ দিচ্ছে সোজা ক্ষমতা পেয়ে বসছে; এরা কেউ না রাজনীতি বুঝে না রাষ্ট্রনীতি। এইসব কার্যসমূহ, একটি দেশ ও জাতির জন্য প্রগতিশীল নয়!! আমি প্রধানমন্ত্রী হলে দেশের শিক্ষা খাতে ও কৃষি খাতে খুব বেশি প্রাধান্য ও পৃষ্ঠপোষকতা দিতাম। কিন্তু সেই সুযোগ আমার নাই কারণ আমার বাবা কোন রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব না বা মামা-চাচা কেউই রাজনৈতিক নেতা না। হলে আমি ঠিকই রাজনীতি করতাম, ক্ষমতায় যেতাম আর সেই দুর্নীতিই করতাম। আসলে সিস্টেমটাই এমন হয়ে গেছে!! কেন এমন হলো? কারণ, এই সিস্টেম তৈরি করে ফেলা হয়েছে! আমাদের দেশে একটা কথা প্রচলিত আছে যে, "মন্ত্রীর ড্রাইভারও মন্ত্রী"! কিভাবে?! আশ্চর্যজনক হলেও সত্য। প্রধানমন্ত্রী কি আর সব দিকে খোঁজ খবর রাখতে পারে? পারে না। যখন কোনো নেতা কর্মী বা এমপি মন্ত্রীর কারোর তদবিরের প্রয়োজন হয় তখন সে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ধরনা দেয়, যখন সরাসরি কাজ না হয়, তখন তারা ওই ডুপ্লিকেট মন্ত্রীর হাত ধরেন, আর কাজ উসুল করে নেন! এই পথে কিভাবে কাজ হয়, তা অনেক বড় এক রহস্য! আর এই পথে কাজ বন্ধ হয়ে গেলে তখন প্রধানমন্ত্রীর খারাপ দিন শুরু হয়ে যাবে! এই ভাবেই চলে আসতেছে; একদম নিচের সারির যে নেতা কর্মী যারা আছেন তাদের স্বার্থ উদ্ধার না হলেই তারা চোখ উল্টাবে, মানে দল বদল....! যেখানে খুব সুবিধা পাওয়া যাবে, মন মত কাজ উদ্ধার হবে তারা সেখানেই যাবে! এখানে আমি প্রধানমন্ত্রীর প্রশংসা করছি না বা একজন কাউকে নির্দিষ্ট করে কথা গুলো লিখছি না। লিখছি পুরো অন্তর্বর্তী সমস্যা নিয়ে! প্রথম থেকেই যা হয়ে আসছে তা এখন খুব সহজে বন্ধ করা যাবে না! তার মানে ভুল প্রথম থেকেই হয়ে আসছে, যা এখন শোধরানো সহজ পথের বাইরে চলে গেছে!! এখন এই সব ভুল শোধরাতে হলে ১৯৭১ এর পেছনে চলে যেতে হবে!! কম করে হলেও মুক্তিযুদ্ধের ২০ বছর পেছনে যেতে হবে!! [ ধরা যাক, এই ব্লগ থেকে কাউকে প্রধান মন্ত্রী বানিয়ে দেয়া হলো, যেমন চাঁদগাজী ভাইকে প্রধানমন্ত্রী বানানো হলো, দুঃখের বিষয় তাকেও এই সিস্টেমের সাথে চলতে হবে! এখন সে যদি সিস্টেম বদলাতে যায় তখন সিস্টেম তাকে বদলে ফেলবে!! ] তবে এখানে একটা কথা বলতে হয় যে, এদেশের প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি আরও মন্ত্রীগণ সকলেই যারা আছেন তারা সবাই স্বজনপ্রীতি দেখান বেশি!! কেউই দুর্নীতির বাইরে নন। কেউই দুর্নীতি বিহীন থাকতে পারছেন না বা চাইছেন না! সবাই দুর্নীতিকে সাপোর্ট করে যাচ্ছেন চোখের আড়ালে!! কেউই সাধারণ মানুষের খোঁজ খবর রাখেন না, তাদের দুর্ভোগের খবর রাখেন না, রাখলেও খুব বেশি না!! কোথাও দুর্ভোগ হচ্ছে সেখানে নজর কম বা খুব একটা ধার ধারে না! যখন মিডিয়ার চোখে পড়ে তখন তাদের সেখানে দেখা যায়। যেমন ঢাকায় একটু বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু প্রশাসনের কাজের অগ্রগতি নিয়ে কোনও মাথা ব্যাথা নেই! ঠিক যেমনটা নেই নদী মাতৃক অঞ্চল, গ্রাম অঞ্চল গুলো নিয়ে যেখানে বন্যা ও নদী ভাঙ্গন প্রতি বছরই হয়ে থাকে। প্রশাসন এই দিকে উদাস! পারলে বলে দিতো, বন্যার দিন বন্যা হবে নদী ভাঙবেই আমরা কি করবো!! বৃষ্টির ছাড়াও খরার দিনেও প্রশাসন উদাস! কোথা হতে পানি সংগ্রহ করা যায় বা কিভাবে পানি সরবরাহ করা যায় সে ব্যাপারেও তারা উদাস। পানি উন্নয়ন বোর্ডের সামনেও বৃষ্টির দিন পানি জমে থাকে! অথচ বিশুদ্ধ পানি দিতে ব্যর্থ!(এটা একটা উদাহরণ মাত্র, এরকম আরও অনেক রয়েছে) প্রশাসন মনে করতে চায় না যে, জনগণের টাকায় তাদের বেতন করা হয়! তাদের যে একটা দায়িত্ব কর্তব্য আছে সেটা তারা মনে রাখতে চায় না। তাদের চিন্তা কিভাবে দুর্নীতি করে মোটা অংকের টাকা কামানো যায় আর মাস শেষে বেতন টা কখন পাওয়া যাবে!! দেশ যেরকম চলছে সেরকমই থেকে যাবে! কোনই প্রগতি হবে না, নতুন আশা জাগবে না, রেভলুশন বা আমূল পরিবর্তন হবে না। চাকুরীজীবি সবাই ওই সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত ডিউটি করবে, রাজনীতিবিদ ক্ষমতার গরম দেখাবে, বিচার প্রক্রিয়া পক্ষপাত দুষ্ট হবে, এমপি, মিনিস্টারদের দুর্নীতি বন্ধ হবে না!! শিক্ষা ও অশিক্ষার মধ্যে পার্থক্য উঠে যাবে। একজন সরকারী চাকুরীজীবির কথা: যে যাই করুক, যা ইচ্ছা তাই করুক, সরকার, মন্ত্রী দুর্নীতি করুক আর নাই করুক আমার মাথা ব্যাথা নাই, আমি ভালো আছিতো এইটুকুই চলবে। মন্ত্রী মিনিস্টার দুর্নীতি করে ব্যাংকে টাকা ভরে ফেলুক আমার তাতে কিছুই আসে যায় না, কোনো মাথা ব্যাথাও নাই! ( এবার বলেন কি করা যায়) এই দেশের মানুষকে দিয়ে আদৌ কি Revolution সম্ভব! আদৌ কি উন্নতি সম্ভব?! ভাবুন..... এই যদি দেশের মানুষের দেশ নিয়ে চিন্তা ভাবনা হয় তাহলে কিভাবে একটা দেশ সামনে এগিয়ে যাবে?? আমরা পকেটে টাকা, বাড়িতে এসি, চিকন চালের গরম ভাত হলেই কি সব পাওয়া হয়ে গেলো! দেশ নিয়ে কি কারও চিন্তা থাকতে পারেনা বা চিন্তা করবে না?! একটা জাতির কিছু মানুষ নিজ স্বার্থ নিয়ে ব্যস্ত, কিছু মানুষ ভালো মন্দ বুঝে না এবং বুঝার চেষ্টাও করে না, অধিক সংখ্যক মানুষ ভীতু ভয়ে কোনো কথাই বলতে রাজি না, কিছু মানুষ বলছে হয়তো নিজের স্বার্থ উদ্ধার করার জন্য একটা কৌশল অবলম্বন করছে, আর কিছু সংখ্যক মানুষ কলম দিয়ে যুদ্ধ করছে বা ভার্চুয়াল জগতে লিখে যুদ্ধ করছে! মানে স্বার্থহীনভাবে সত্য বলার মত মানুষ এখন সম্ভবত অণুবীক্ষণ যন্ত্রের মাধ্যমে খুঁজে বের করতে হবে। আর এই যদি হয় একটা দেশের সমগ্র জনগণের অবস্থা তাহলে একটা জাতি জাগ্রত হবে কিভাবে..?? আমাদের ছোটবেলায় শেখানো হত, মিথ্যে বললে আল্লাহ্ নামাজ, ইবাদাত কবুল করেন না। যদি সাথে এও শেখানো হতো যে ঘুষ নিলে ও সুদ লেনদেন করলে দুর্নীতি করলে মানুষের ক্ষতি করলে বা খারাপের চিন্তা করলে নামাজ, ইবাদাত কবুল হয় না তাহলে আরও ভালো একটা শিক্ষা পাওয়া যেত। কই আদৌ পর্যন্ত তো কাউকে এমন শিক্ষা দিতে দেখা গেল না!! Revolution comes in a Millennium. কথাটা একটা সময় ভুল প্রমাণিত হতে পারে! একচুলি হয়ে গেছেই...!! Revolution বা আমূল পরিবর্তন এদেশে এখন বোধহয় অসম্ভব! . আমি একবেলা কম খাই, চেষ্টা করতেছি দুই বেলা কম খাওয়ার জন্যে। এটা আমি এই জাতি, এই সমাজ, সমাজ ব্যবস্থা, প্রশাসন, সরকার ব্যবস্থাকে ধিক্কার জানাতে করছি। পাদটিকা ১ : ক্ষুদিরামকে যখন ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যাওয়া হয় তখন তাকে তার শেষ ইচ্ছের কথা জিজ্ঞেস করা হয়। ক্ষুদিরাম বলেছিলো, তোমরা আমার ইচ্ছে কখনই পূরণ করতে পারবে না! তবুও ব্রিটিশ পুলিশরা জানতে চেয়েছিলো, ক্ষুদিরাম বলেছিলো, আমি বাংলার স্বাধীনতা দেখতে চাই। পাদটিকা ২ : আমেরিকায় কোনো বাচ্চাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয় তুমি বড় হয়ে কি করবে তাহলে সে বলে, 'আমি বড় হয়ে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবো'। প্রায় ৯০% বাচ্চাই একই উত্তর দিবে। জেগে ঘুমিয়ে থাকলে তাকে ঘুম থেকে কখনোই জাগানো যায় না! জাতি এখন খুব মহা এক ঘুমের ঘোরে আছে, যেখান থেকে জাগাতে হলে বিপ্লব অবশ্যই প্রয়োজন.. .... [ এবং সবশেষে, পোষ্ট খানি সত্যই বড় হয়ে গেছে সে জন্যে আন্তরিক ভাবেই দুঃখিত, কাউকে কষ্ট দেয়ার জন্যে লেখাটি লেখিনি। শুধুমাত্র দেশ ও জাতির সামগ্রিক অবস্থা কিছুটা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি মাত্র।] ছবি কৃতিত্ব: নিজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তোলা।